ওদের মুখ দেখবো না:তাই আদালতে যাচ্ছি না:আবরারের মা দুই বছর দুই মাস পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ রোববার। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ উপস্থিত থেকে এ রায় শুনবেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ।ছেলে হত্যার রায় শুনতে এদিন আদালতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল আবরারের মা রোকেয়া খাতুনেরও।
তবে শেষমুহূর্তে তিনি আদালতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বাসায় বসে শনিবার (২৭ নভেম্বর) এ কথা জানান স্কুলশিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন।রায় ঘোষণাকালে আদালতে না থাকার কারণ জানতে চাইলে আবরারের মা বলেন, ‘ওদের (আসামিদের) মুখ আমি দেখতেই চাই না, তাই আদালতে যাচ্ছি না।’
রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুন-খারাবি চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গেছে, কাল আরেকজন মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, কষ্ট পেতে না হয়।’পরক্ষণেই হয়তো রোকেয়া খাতুনের চোখে ভেসে ওঠে ছেলে আবরারকে নির্মম-নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যার সেই দৃশ্য। অজান্তেই ঢুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
ওদের মুখ দেখবো না:তাই আদালতে যাচ্ছি না:আবরারের মা বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে ওরা গুলি করেই মেরে ফেলতে পারতো। তাহলে ওর হয়তো এতোটা কষ্ট হতো না।’চোখ মুছতে মুছতে এবার কিছুটা দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘অবশ্য এ মামলায় আরও কয়েকজনের নাম আসা দরকার ছিল। যারা আশপাশের রুমে ছিল, আবরারকে মারার খবর জেনেও কাউকে বলেনি; তাদেরকেও এ মামলায় আসামি করা উচিত ছিল।
একটা ছেলেকে এমনভাবে মারা হলো, যারা জানলো তারাও চোখ বুজে থাকলো, এটাও তো অপরাধ।’এদিকে, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ রায় ঘোষণাকালে উপস্থিত থাকার জন্য শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া থেকে বাসে করে ঢাকায় এসেছেন আবরারের বাবা ও ছোটভাই। রাতে তারা ঢাকায় পৌঁছান।ঢাকায় পৌঁছানোর পর আবরারের ছোটভাই ফাইয়াজ বলেন, ‘ভাইয়ের হত্যা মামলার রায় শুনতে আব্বার সঙ্গে ঢাকায় এসেছি।
আমাদের সঙ্গে পরিবারের আরও অনেকেই ঢাকায় আছেন। আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করি।’ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওইদিন রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।গ্রেফতার ২২ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
মামলার তিন আসামি এখনো পলাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আসামি।২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।
জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে পলাতক তিন আসামিসহ ২৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।আদালত সূত্রে গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পড়ে শোনান।
এসময় বিচারক তাদের প্রশ্ন করেন, আপনারা দোষী না নির্দোষ? উত্তরে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এরপর আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।গত ৮ সেপ্টেম্বর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ পুনরায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আবেদন করে।