
আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ।।
জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালীকচ্ছ গ্রামের জামাই। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার কড্ডা গ্রামে। দলীয় ও ব্যক্তিগত কারণে মাঝে মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসলেও তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন দীর্ঘ বছর যাবত।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার জামাতা। সাংসদ জিয়াউল
হক মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিগত ১০ বছর যাবত এই আসনের এমপি। এখানকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষেরা আবারো এমপি হিসেবে তাঁকেই চান। সেই সুবাধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা তৃত্বীয়বারের মতো এ আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে দলের তথা মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। অপরদিকে জিয়াউল হকের জামাতা এই নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম নেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আসন বন্টন নিয়ে নানা আলোচনার পর শরিকদল জাতীয়পার্টিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি আবারো দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এ জেলায় জাতীয়পার্টি পেয়েছে একটিমাত্র আসন। নিজের কাঙ্ক্ষিত আসন না পেয়ে জামাই (রেজাউল) তাঁর শ্বশুরের (জিয়াউল) দখলে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটিতে মনোনয়ন পেতে দলীয়ভাবে নানা কূটকৌশল শুরু করেন।
খবর পেয়ে শ্বশুর (জিয়াউল হক) ঢাকা গিয়ে এ বিষয়ে জামাতার (রেজাউল) ওপর (পরিবারের দাবি নিয়ে) চাপ সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে ঘরের ও বাইরের অব্যাহত চাপে জামাতা রেজাউল ইসলাম শ্বশুর জিয়াউল হককে কথা দেন এই বলে ” তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কখনো প্রার্থী হবেন না।” শুধু তা-ই নয়, বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাতকার দেন এবং জনস্বার্থে তার এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করতে অনুরোধও জানান রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া।
গত বৃহস্পতিবার ” অজানা বাংলাদেশ” এর এ প্রতিবেদককের সাথে মুঠোফোনে সাক্ষাতকারে জা’পার কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া দম্ভের সাথে বলেছিলেন (বক্তব্য রেকর্ড সংগ্রহকৃত)- আমি ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষ না। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা, আমি আমার এ আসন থেকে নির্বাচন করবো। আমি শ্বশুরবাড়ির এলাকায় সরাইল-আশুগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবো, এ কথা আমি চিন্তাও করি না। সেখানে জিয়াউল হক মৃধা আছেন। তিনি মুরব্বী, আমার আত্মীয় (শ্বশুর), তিনি নির্বাচন করবেন। আমি সেখানে নির্বাচন করতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঝামেলা করতে যাবো কেন ? তাছাড়া সেখানকার মাঠ আমার সাজানো। জিয়াউল হক মৃধার এমপিগিরি আমি এনে দিয়েছি। তাঁর এমপি হওয়ার পেছনে আমার অনেক অবদান। আমার গড়া মাঠ আমি নস্ট করতে চাই না।
” যদি দল আপনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন দেন তখন আপনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন ? ” এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে, রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার সিদ্ধান্ত ছাড়া দল এ সিদ্ধান্ত নিবে না। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) থেকে নির্বাচন করছি না, এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এদিকে এতোকিছুর পরও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দলীয় সকল শক্তি প্রয়োগ করে তিনি শেষপর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন চৃড়ান্ত করে ফেলেন। এ খবর পেয়ে শনিবার (২৪ নভেম্বর) সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা ছুটে যান ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। একপর্যায়ে শ্বশুর জিয়াউল হকের জন্য আসনটি ফিরিয়ে আনতে জামাই রেজাউল ইসলামের বাসায় শনিবার গভীররাত পর্যন্ত বৈঠক করেন সরাইল উপজেলা জাতীয়পার্টির কয়েকজন নেতা। তাছাড়া এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানাভাবে জামাতা রেজাউল ইসলামকে অনুরোধও করছেন। তারপরও জামাই রেজাউল ইসলাম এ আসনটির ব্যাপারে শ্বশুরকে ছাড় দিতে নারাজ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাংসদ জিয়াউল হকের ঘনিষ্ঠ একাধিক ত্যাগী নেতা।
সরাইল উপজেলা জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব (প্রস্তুতি কমিটি) মোঃ এমদাদুল হক ছালেক এ প্রতিবেদককে জানান, এই আসনে পর পর দুইবারের নির্বাচিত সফল এমপি গণমানুষের নেতা জিয়াউল হক মৃধা। এইবারও এখানকার মানুষ জিয়াউল হককে এমপি হিসেবে দেখতে চান। রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া এখানে নির্বাচন করে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। জামাই (রেজাউল) বেচারা বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছেন না। তিনি তাঁর দেওয়া কথা এখন রাখছেন না। তারপরও আমরা চেস্টা করছি। আশা করি জামাই (রেজাউল) তাঁর কথা রাখবেন।
এদিকে নির্বাচনী এলাকায় নানা মহলে একই কথা ” সরাইলের জামাই শ্বশুরের কথা রাখলেন না। কাজটি তিনি মোটেও উচিত করছেন না।”