গাউছুল আজম আহমেদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর জীবনী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী বা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (১৫ জানুয়ারি ১৮২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি-২৩ জানুয়ারি ১৯০৬) সালে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন এই আল্লাহর অলি, তিনি একজন সুফি সাধক ও মাইজভান্ডারী তরীকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তার অনুসারীগণ যে সকল,প্রচার-প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে আসছে, তাতে তার নাম গাউছুল আজম হযরত মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কেবলা ক্বাবা কাদ্দাছাল্লাহু ছিরহুল আজিজ / (কঃ) লিখতে দেখা যায়।
এছাড়া তার অনুসারীগণ তাঁকে গাউছুল আজম, হযরত কেবলা, বড় মৌলানা, খাতেমুল অলদ, শাঁই-এ-লিল্লাহ্ প্রভৃতি উপনামেও ডেকে থাকে। আহমদ উল্লাহর পূর্বপুরুষগণ ছিলেন সৈয়দ এবং মূলত মদিনা থেকে বাগদাদ ও দিল্লি হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্ববর্তী রাজধানী গৌড়ে চলে আসেন। তার প্র-প্রপিতামহ, হামিদ আদ-দীন ছিলেন গৌড়ের নিযুক্ত ইমাম ও কাজী, কিন্তু শহরে হঠাৎ মহামারীর কারণে হামিদ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় চলে আসেন।
হামিদের ছেলে সৈয়দ আবদুল কাদিরকে আধুনিক সময়ে ফটিকছড়ির আজিমনগরের ইমাম করা হয়েছিল। তার দুই পুত্র ছিল; সৈয়দ আতাউল্লাহ ও সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ। শেষের জনের তিন পুত্র ছিল; সৈয়দ আহমদ, সৈয়দ মতিউল্লাহ ও সৈয়দ আবদুল করিম এবং তন্মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র হলেন সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর পিতা।
জন্ম সম্পাদনা
আহমদ উল্লাহ ১৮২৬ সালে ১৪ জানুয়ারী (১ম মাঘ, ১২৩৩ বাংলা সন) চট্টগ্রাম শহর হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা। তার পারিবারিক নাম ছিল সৈয়দ আহমদ উল্লাহ।
শিক্ষা জীবন সম্পাদনা
আহমদ উল্লাহ গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যান, ১২৬৮ হিজরীতে সেখান থেকে পাশ করেন। সেখানেই তিনি তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার কাজে লিপ্ত ছিলেন।
গাউছুল আজম আহমেদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর জীবনী তিনি সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ কাদেরী লাহোরীর কাছ থেকে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি আবু শাহমার বড় ভাই দিলওয়ার আলী পাকবাজ লাহোরীর কাছ থেকেও অধ্যয়ন করেন।
কর্ম জীবন সম্পাদনা
তিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী ১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলিকাতায় মুন্সী বু আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন।
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মানতিক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার খ্যাতি ছিল। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্ত্রী মারা যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন।
১২৭৮ হিজরী সালে তার প্রথম মেয়ে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর তার আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। তার দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে মৃত্যুবরণ করেন।
তরিকা-এ-মাইজভান্ডারিয়া সম্পাদনা অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন রিভিউ ট্রাইব্যুনাল (এমআরটি) এবং রিফিউজি রিভিউ ট্রাইব্যুনাল (আরআরটি) দ্বারা তৈরি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মাইজভান্ডারিয়া সুফি তরিকার আজ কয়েক লক্ষের বেশি অনুসারী রয়েছে।