গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি করতে কায়রোতে শনিবার থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির জন্য সবশেষ যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সেটি পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিনিধি দলটি ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে কায়রোয় গেছে।
‘ফিলিস্তিনিদের দাবি পূরণের জন্য একটি চুক্তি করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ,’ বলেছে হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, হামাসের জন্য ‘যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত সহজ সিদ্ধান্ত’।
হামাসের আলোচনাকারীরা যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরুর জন্য মিশরের রাজধানীতে ফিরে এসেছেন।
এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিশর ও কাতার। কোনো চুক্তি সম্পাদন হলে গাজায় ইসরাইলি অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ হবে এবং বিনিময়ে জিম্মিরা মুক্তি পাবেন।
শনিবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা আলোচনার টেবিলে চুক্তিটি চূড়ান্ত হোক তাই চায়, যদিও অনেকগুলো বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো মতপার্থক্য আছে।
এর মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কি সাময়িক নাকি স্থায়ী হবে – সে প্রশ্ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
হামাস চায় এমন চুক্তি বা সমঝোতা হোক যাতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকবে। অন্যদিকে ইসরাইলে হামাসের তৎপরতা থাকবে এ নিয়ে কোনো চুক্তিতে সম্মত হতে রাজী নয় দেশটি।
ধারণা করা হচ্ছে যে, এ আলোচনায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি আলোচনা হবে। একই সাথে ইসরাইলের কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিও মুক্তি পাবেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বারংবারই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে নতুন সামরিক অভিযানের কথা বলে আসছেন, এমনকি চুক্তি হলেও।
ইসরাইলি মিডিয়া যে খবর দিচ্ছে তাতে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার শুরু হলেও দেশটির অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।
তবে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ও সামরিক সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র নতুন কোনো অভিযানের পক্ষে নয়, যেখানে বিরাট সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশঙ্কা থাকে।
বরং দেশটি আগে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় একটি পরিকল্পনা দেখতে চাইছে।
গাজার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের কারণে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ পালিয়ে রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ বলেছেন, কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া যাবে তখন যুদ্ধকালীন কেবিনেট বসে আলোচনা করবে।
তখন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক সূত্র ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের শান্ত থেকে কাজ করতে হবে ও রাজনৈতিক কারণে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত না হয়ে অফিসিয়াল আপডেট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএ’র পরিচালক সর্বশেষ এ আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য কায়রো গেছেন বলে বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার বিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন দুই কর্মকর্তা।
ব্লিঙ্কেন নিজেও এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। এ সপ্তাহেই তিনি নেতানিয়াহুর সাথে ইসরাইল গিয়ে কথা বলেছেন।
শুক্রবার অ্যারিজোনায় ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজার মানুষ ও যুদ্ধবিরতির মধ্যে একমাত্র বাধা ছিল হামাস।
গত কয়েকমাস ধরেই বড় কোনো অর্জন ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। নভেম্বরের পর থেকে যুদ্ধবিরতি বা কোনো জিম্মি মুক্তির ঘটনা ঘটেনি।
এ সময়ে কয়েকবার নতুন চুক্তির সম্ভাবনা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষরের আগে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।
এমনকি শেষ দফার আলোচনায় সতর্কতার প্রয়োজন। আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্র বলছে, আলোচনায় জটিলতা রয়েই গেছে এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।