
আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
দিন দিন অস্থিরভাবে বাড়ছে নানা পণ্যের দাম। বেসামাল হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। ফলে অস্থির হয়ে উঠেছে চালসহ নিত্যপণ্যের বাজারদর। ফলে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ চাপের মধ্যে পড়েছেন। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাদের দাবি, জিনিষপত্রের দাম বাড়লেও কমেছে মানুষের দাম।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের দিনমজুর আল আমীন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। আগে দৈনিক চার থেকে পাঁচশত টাকা চুক্তিতে কাজ করতেন তিনি। অজানা কারণে হঠাৎ শ্রমের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় এখন দৈনিক দুইশত ২০ টাকা থেকে দুইশত ৫০ টাকায় চুক্তিতে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। অনেক সময়ে এই কম মূল্যেও কাজ মিলছে না তার। ফলে পরিবারের
সদস্যদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এদিকে চাউল সহ নিত্যপণ্যের বাজার দর বেড়েই চলেছে।উপজেলার চুন্টা এলাকার দিনমজুর বাবুল মিয়া। তিনি দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা চুক্তিতে বিভিন্ন মানুষের কৃষি জমিতে কাজ করতেন নিয়মিত। কৃষিতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জমিতে পাঁচজনের স্থলে তিনজন দিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে প্রতিদিন কাজের উদ্দেশ্যে বের হলেও প্রায়ই কাজ মিলছে না তার। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় এখন তিনি।দক্ষিণ কালীকচ্ছ গ্রামের মোঃ মনির হোসেন। বিভিন্ন কৃষকের জমিতে গরু দিয়ে হাল চাষ ছিল তার পেশা। কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কারণে তার বাপ-দাদার আদি পেশা গরু দিয়ে চাষাবাদের কাজ তাকে ছাড়তে
হয়েছে। সংসারে দু’মুঠো ভাত জোগাড়ে এখন তিনি পথে পথে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। মনির হোসেন আক্ষেপ করে জানান, দিন দিন জিনিষপত্রের দাম বাড়লেও কমছে মানুষের দাম। আগে কৃষি কাজ করে সংসার ভালোই চলতো, এখন ঝালমুড়ি বিক্রির টাকায় সংসার চলতেই চায় না। সদরের সিএনজি অটোরিকশা চালক মোঃ রতন মিয়া জানান, আগে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা আয় হতো। এখন এক হাজার টাকা আয় করতে হিমশিম খেতে হয়। গাড়ির আমদানি ৬০০ টাকা দেওয়ার পর সংসার চালানোর মতো টাকা আর থাকে না।কুট্টাপাড়া গ্রামের মোছাঃ লিপি বেগম। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মাসিক আট হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করতেন। নানা কারণে সেই প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় কতৃপক্ষ
কয়েকজনকে ছাঁটাই করে এবং তার বেতন কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করে। এ বেতনের টাকায় সংসার না চলায় তাকে চাকুরিটা ছেড়ে দিতে হয়। লিপির দাবি, জিনিষপত্রের দাম বাড়লেও দিন দিন মানুষের দাম কমছে।এদিকে স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সে হারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি।অপরদিকে হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও দিন দিন বাড়ছে। চাপের মধ্যে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে নিত্য কাটছাঁট করতে হচ্ছে খাদ্যতালিকা।
সরাইল সদরে বাজার করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান, যে বেতন পান তাতে চাল কিনতেই অর্ধেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর ঘরভাড়া এবং সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন। দাম বাড়ায় শাক-সবজিও কিনতে হচ্ছে মেপে মেপে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তিনি এখন চোখে সর্ষের ফুল দেখছেন। দিশাহারা হয়ে শাহ আলম এখন স্ত্রীর জন্য চাকরি খুঁজছেন।স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে বাজারে চাল সহ নানা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আমদানি সংকটতো রয়েছেই।এদিকে খুচরা বিক্রেতারাও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে আরও একধাপ বাড়াচ্ছে চাল সহ নিত্যপণ্যের দাম।
এদিকে পরিবহন মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেখিয়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম চড়া। সবজি থেকে শুরু করে মাছ মাংস, ডাল ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আরেক ধাপ।সোমবার (১৪ জানুয়ারী) উপজেলার সদরের বাজার, কালীকচ্ছ বাজার, শাহবাজপুর বাজার ও অরুয়াইল বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা দরে। সবজি ও মাছের বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। শীতকালে সবজির দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।নিত্যপণ্যের দাম বাড়া প্রসঙ্গে গৃহিণী রোজিনা বেগম বলেন, আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের খাওন নাই। খাওন শুধু প্রবাসী আর বড়
লোকদের। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে এভাবে যদি সব জিনিসের দাম বাড়ে তাহলে বাজারে আসা আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।এদিকে সব ধরনের ছোট ও বড় মাছের দাম বাড়তির দিকে।প্রতিকেজি তেলাপিয়া ১৪০, সরপুটি ১৫০, মাঝারি রুই ১৮০, বড় রুই ৩০০, কই ২৪০, শিং মাছ ৪০০-৬০০, কাতলা ২০০-২৫০, পাঙ্গাস ১৩০, টেংরা ৩০০ টাকা ও পাঁচ মিশালি মাছ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।বছরের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কিছুদিন পর তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের ডিমের দামও। প্রতিহালি দেশি মুরগির ডিম ৪৮, হাঁস ৪৫, ফার্মের সাদা ডিম ৩৮ ও লাল ডিম ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।