
আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক।।
এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার মন ভালো নেই। তার প্রিয় মানুষ এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। তাই ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। বিষণ্নতা গ্রাস করেছে বিদিশাকে। তাই এরশাদের সুস্থতা কামনায় ভারতের আজমির শরিফে দোয়া করেছেন।গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বিদিশা জানান, তার মনটা এখন ভালো নেই। বর্তমানে আজমির শরিফে রয়েছেন তিনি। দোয়া চেয়েছেন দেশবাসীর জন্য, দোয়া চেয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য।এইচ এম এরশাদ সম্পর্কে বিদিশা জানান, উনার (এরশাদ) সঙ্গে আমার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক না থাকলেও উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় উনি আমার সন্তান এরিকের পিতা। উনি ভালো না থাকলে আমার ছেলে ভালো থাকবে না। আর ছেলে ভালো না থাকলে আমি ভালো থাকবো না।
বিদিশা গণমাধ্যমকে আরো জানান, একদিন আমরা সকলেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। উনার (এরশাদ) সঙ্গে আগে আমার কি হয়েছে, সেই বিচার তো এখন আমি করবো না। উনি উনার সন্তানকে ভীষণ ভালবাসেন। মা-বাবা দুজনের ভালবাসা দিয়েই তিনি এরিককে আগলে রেখেছিলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এরিককে হাতছাড়া করেননি। এটাই আমার জীবনের একটি বড় পাওয়া।অসুস্থ এরশাদকে দেখতে সিএমএইচে গিয়েছিলেন বিদিশা। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমি ভারতে আসার আগে উনার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। আমি তাকে দেখতে সিএমএইচে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৪০ মিনিট উনি (এরশাদ) আমার হাত ধরে বসে ছিলেন।
এদিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন এরশাদ। রবিবার দুপুর ১২.৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। জাপা চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ, ছোট ভাই হুসেইন মোর্শেদ ও তার স্ত্রী রুকসানা খান মোর্শেদ আছেন।সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাপার কেন্দ্রীয় নেতারা এরশাদকে বিদায় জানান। এ সময় তার পাশে ছিলেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। বিদায় বেলায় এরশাদকে এদিক-সেদিক তাকাতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন তিনি। একাধিক নেতা জানান, এরশাদ মূলত তার স্ত্রী রওশনকে খুঁজছিলেন। তবে বিদায় জানাতেও আসেননি রওশন।
যাকে নিয়ে দীর্ঘ সময় সংসার করেছেন এরশাদ। এমনকি রাজনীতিতে এনে এমপি, মন্ত্রী সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতাও বানিয়েছেন। সেই স্ত্রী রওশন এরশাদ বিমানবন্দর গিয়ে স্বামী এরশাদকে বিদায় জানানোর প্রয়োজনবোধও করেননি উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গুরুতর অসুস্থ। গত কয়েকদিন ধরেই এরশাদের ক্ষুধা মন্দা বেড়েই চলেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোববার (২০ জানুয়ারি) তাকে নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুর। এরশাদের এই অসুস্থতায় জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে নেমেছে শোকের ছায়া। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা খুব বেশি কিছু
করার নেই বলেই মন্তব্য করেছেন। চিকিৎসার পরিভাষায় এটাকে বলা হয় বার্ধক্যজনিত রোগ।১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এরশাদ জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি নব্বইয়ে পা দেবেন। নয় বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখা এই সামরিক একনায়ককে ‘স্বৈরাচারী শাসক’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। ৯০ এর গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ কিছুদিন কারাবরণ করলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি এখন পর্যন্ত একজন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।