আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা প্রশাসনপাড়ায় মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারী) ভোররাতে একটি পুকুর চুরির ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা সরকারি এই পুকুর থেকে গোপনে জাল ফেলে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মাছ তোলে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারি সহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা। অনেকে সরকারি এই পুকুর থেকে এইভাবে মাছ তোলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে চুরি বা পুকুর চুরি হিসেবে অবহিত করছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারী) দুপুরেরদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, সকালে অফিসে এসে জানতে পেরেছি এই পুকুর থেকে ভোরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়েছে। যেহেতু পুকুরটি লীজ দেয়া হয়নি। সেহেতু আগের ইউএনও এই পুকুরের মাছ বিক্রির টাকার একটি অংশ এ মসজিদ উন্নয়নের জন্য সবসময় দিয়ে গেছেন। তাছাড়া এ পুকুরের মাছ চাষ সহ রক্ষণাবেক্ষণ করতেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও ইমাম সাহেব।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার ভোররাতে প্রশাসনপাড়ায় পুকুরের মাছ ধরা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা এ প্রতিবেদককে বলেন, এই পুকুরের মাছ বিক্রি করা হয়েছে, কোনো ভাগবাটোয়ারা হয়নি এবং এসবের নিয়ম নেই। মাছ বিক্রির সকল অর্থ রাজস্ব ফান্ডে জমা করা হবে।স্থানীয় অনেকের দাবি, সরকারি এই পুকুর থেকে মঙ্গলবার ভোররাতে অন্তত দশ লক্ষ টাকার মাছ ধরা হয়েছে, আসলে কি পরিমাণ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, এটি মূলত উপজেলা পরিষদের সহকারি কামাল হোসেন জানাতে পারবেন।
অপরদিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে সরাইল উপজেলা পরিষদের সহকারি মোঃ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসনপাড়ার ভিতরের সরকারি পুকুর লীজ বা ইজারার নিয়ম নেই। এটি পরিষদের পুকুর। তাই এইপুকুরের মাছ উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাকেও পুকুরের এই মাছ দেওয়া হয়েছে। কোনো মাছ বিক্রি করা হয়নি।অতএব এই মাছ বিক্রি ও টাকা রাজস্ব ফান্ডে জমা দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।এদিকে সরকারি এই পুকুরের মাছ নিয়ে সরাইলের সর্বমহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সরকারি এ পুকুরের চুরির মাছের বন্টন
জনপ্রতিনিধি সহ রাজনৈতিক কয়েকজন নেতা পেয়েছেন। তবে এমন মুখরোচক স্থানীয় লোকদের মন্তব্যের জবাবে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাজী মোঃ ইকবাল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা টাকা দিয়ে মাছ কিনে এনেছি, একেকটি মাছের ওজন পাঁচ থেকে সাত কেজি।অপরদিকে সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, এই পুকুর পরিষদের সম্পদ। এটি ইজারার নিয়ম নেই। এই পুকুরের মাছ প্রশাসনপাড়ায় সবাইকে ভাগবাটোয়ারা করে দেয়ার নিয়ম আছে। তারপরও সবার কাছ থেকে কিছু টাকা তুলে রাজস্ব ফান্ডে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মাহফুজ আলী জানান, সরকারি এই পুকুর আমি কয়েক বছর আগে ইজারা নিয়েছিলাম। তিন বছরের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা। এই পুকুরে অন্তত ২০ লাখ টাকার বেশি বড় বড় মাছ রয়েছে।সরাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুর এ প্রতিবেদককেজানান, বিগত সাড়ে ছয় বছর যাবত এই পুকুরে জাল ফেলা হয়নি। পুকুরের একেকটি মাছের ওজন অন্তত সাত থেকে আট কেজি। এভাবে গোপনে ভোররাতে পুকুরের মাছ ধরে ভাগবাটোয়ারা করা উচিত হয়নি