আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হিন্দু পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোঃ মোবারক আলী নামে ওই বিএনপি নেতা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জিয়া পরিষদ‘ এর ভাইস চেয়ারম্যান।এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা মোবারক আলী স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাধিক পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। তার যোগসাজশে এখানকার কয়েকটি হিন্দু পরিবার জমি-জমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। হিন্দু সম্পত্তি কৌশলে ভোগদখল করতে এই বিএনপি নেতা একেক সময়ে একেক হিন্দু পরিবারের সাথে মিশে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তার পেশীশক্তি চালিয়ে যাচ্ছে।
এতে শান্ত বিটঘর গ্রাম অশান্ত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চচিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ গ্রামের মাতাব্বররা। এসব নিয়ে এখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে পারে এমন অভিমত স্থানীয় অনেকের। তারা এই সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।গত শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন বিটঘর গ্রামে গেলে, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ইজ্জত আলী বলেন, গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রমোদ চন্দ্র দেবনাথ ও অধীর দেবনাথের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে বিএনপি নেতা মোবারক আলী। প্রমোদ দেবনাথের বাপ-দাদার একটি ৬০ শতাংশ জমি, অন্তত ৫০ বছর যাবত এই জমি তাদের দখলে। অথচ কুচক্রী মহলের অপশক্তিতে আরেক হিন্দু নিরীহ পরিবারের সদস্য অধীর দেবনাথকে এখানে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ওই
জমি দখলের পায়তারা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সালিশ হলেও কুচক্রী মহলের কারণে তা সমাধান করা যাচ্ছে না।গ্রামের সালিশকারক আবদুল কাইয়ূম (৮০), আবদুল কাদির (৭০), মোঃ নুরুল হক (৬৫), মোঃ আইয়ূব খান (৫৮), লিয়াকত আলী (৫২), মোশারফ হোসেন (৫৫), যতীন্দ্র দেবনাথ (৭২), মোঃ ওয়াহিদ মিয়া (৫৪) সহ গ্রামের অন্তত ১৫ জন সর্দার-মাতাব্বর সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে জানান, বিএনপি নেতা মোবারক আলী বিটঘর গ্রামকে অশান্ত করার অপচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার কু-পরামর্শে হিন্দু পরিবারগুলো নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। তার উদ্দেশ্য এসব পরিবার মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে, তাদের সহায়-সম্পত্তি মোবারক আলী যেন কৌশলে নিজের করে নিতে পারে। মোবারক আলী বিএনপির একজন
প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় গ্রামের মানুষ তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। ওই হিন্দু পরিবারের সমস্যা নিয়ে কয়েকদিন আগে গ্রামে সালিশ হয়। কিন্তু একটি পক্ষ জমির বৈধ কাগজপত্র দেখালেও অপরপক্ষ জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও বিগত ৫০ বছরের দখলীয় জমিতে প্রমোদ দেবনাথ এখন চাষাবাদ করতে পারছেন না, শুধু ওই বিএনপি নেতার অসৎ কর্মকান্ডের কারণে।
এ বিষয়ে বিটঘর গ্রামের প্রমোদ দেবনাথ বলেন, আমার বৈধ মালিকানা জমি এখন তারা জোরপূর্বক দখলে নিতে চায়। আমি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। তিনি বলেন, স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার নজর পড়েছে আমার বাপ-দাদার সম্পত্তির উপর। এই জন্য আমার গোত্রের অন্যজনকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছেন ওই বিএনপি নেতা। আর কিছু বলার অপরাগতা প্রকাশ করে প্রমোদ দেবনাথ বলেন, ওই নেতার নাম আমি মুখে নিতে পারবো না। আমরা অসহায় মানুষ। আমার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবে ওই নেতার গোষ্ঠির লোকজন।
এ বিষয়ে সরাসরি সাক্ষাতে বিএনপি নেতা মোবারক আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি জেলা জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সরাইল উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। আমার রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুন্ন করতে সরকারি দলের কিছু লোক অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি হিন্দু পরিবারের ওই বিষয়গুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম। তবে প্রমোদ দেবনাথ চায়, গ্রামের সকল সর্দার-মাতব্বর নিয়ে এ সালিশ করতে। সে যদি আমার পরামর্শ নিয়ে দু’তিনজন সর্দার-মাতব্বরের মাধ্যমে সালিশে বসে, তাহলে অবশ্যই এসবের সমাধান আমি করে দিব, অন্যথায় সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্য সচিব মোঃ দ্বীন ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বিটঘর গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবার নিজেদের মধ্যে অযথা বিরোধের সৃষ্টি করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিএনপি নেতা মোবারক আলী। বিষয়গুলো নিস্পত্তির একাধিকবার চেষ্টা করেও কোনো কূল কিনারা পাচ্ছি না। এলাকার শান্তির স্বার্থে এসব বিরোধ নিরসনে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে মোবারক আলীর সহযোগিতা চেয়েছি। তবে তিনি নানা শর্ত জুড়ে দেয়ার ফলে তা সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছি না।
এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে প্রশাসনের নজরধারী দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।এ ব্যাপারে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, বিটঘর গ্রামে বিএনপি নেতা মোবারক আলী নানা কৌশলে ওখানকার কয়েকটি হিন্দু পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছে, এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ দেয়া হবে না।