
মাহমুদুল হাসান:টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র নজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ও বাদে ভূগোলহাট গ্রামের মোকছেদ সেকের মেয়ে লিপি আক্তার (১৪) পার্শ্ববর্তী বাড়ির করিম সেকের লম্পট ছেলে মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে এখন ৮ মাসের অন্ত:সত্তা।লিপি আক্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে মা হতে চলছে কিন্তু বাবা হচ্ছে না কেউ। লিপি বলেন, আমি আমার সন্তানের পিতার পরিচয় চাই এবং দোষীর শাস্তি চাই।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদ তাকে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় প্রেমের প্রস্তাব দিত। প্রথম দিকে লিপি আক্তারের অসম্মতি থাকলেও পরে একসময় তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর সুবাদে মাসুদ প্রায়ই তাদের বাড়ীতে যাতায়াত করতো।এ কাজে মাসুদকে সহযোগীতা করতো লম্পট মাসুদের চাচী আম্বিয়া বেগম।
গত বছরের ১৬ ই জুন শুক্রবার মাসুদ তার বাড়ীতে কেউ না থাকায় তার চাচী আম্বিয়া বেগম কে দিয়ে লিপি আক্তার কে নিজ বাড়ীতে ডেকে এনে ধর্ষণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে লিপি আক্তার বুঝতে পারে সে মা হতে চলেছে। প্রথম প্রথম লোক-লজ্জার ভয়ে কাউকে না জানালেও পরবর্তীতে তার মা বিষয়টি বুঝতে পারেন। মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদের পরিবার ধনী ও সম্ভ্রান্ত হওয়ার ঘটনা
প্রকাশ না করে চুপ থাকেন। পরবর্তীতে লিপি আক্তারের শারিরীক পরিবর্তন দেখা দিলে তিনি সমাজের মাতাব্বর শ্রেণীর লোকের দারস্থ হন। কিন্তু মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদ ও তার পরিবার এ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে সমাজের লোকজন তাদের কে নানা কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে।
সমাজপতিদের কাছে সুবিচার না পেয়ে লিপি আক্তার বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন।লিপি গত বছরের ১৬ জুন তারিখে শুক্রবার করিম সেকের ছেলে মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদের দ্বারা করিম সেকের ঘরে ধর্ষণের শিকার হয় বলে ধর্ষিতা অভিযোগ করে নারী ও শিশু নির্যাতন পি: ৪২৬/১৮
ধারা :- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী/ ২০০৩ এর ৯(১) ১৩/৩০ এর স্মারক নং ৪১৭/না:শি:টাং তারিখ ২১/১০/২০১৮ ইং । মামলায় লিপি নিজে বাদী হয়ে মাসুদ সেক ও আম্বিয়াকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কমল সরকার ,এস আই ডিবি (দ:) টাঙ্গাইল। পরিদর্শন ও তদন্ত রিপোর্টে তিনি উল্লেখ
করেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনায় মামলায় উল্লেখিত বিবাদীগনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মাতাব্বরা আপোস করে এক লাখ আশি হাজার টাকা জরিমানা করে মাসুদকে এবং ১৫০টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্পে সে আপোসনামা লিখে নোটারি পাবলিক করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিপি আক্তার জানান মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদের সাথে দুই বছর আগে আমার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। আমাকে বিয়ের লোভ দেখিয়ে মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদ তার চাচীর সহযোগীতায় আমাকে ঘটনার দিন তার নিজ বাড়ীতে ডেকে আনে ও আমাকে ঘরের ভেতর আটকিয়ে জোড় পূর্বক সহবাসের চেষ্টা চালায়। বিবাহ পূর্বে সহবাস অনৈতিক বিধায় আমি বাধা প্রদান করিলে
সে জোড় জবরদস্তি করে আমাকে ধর্ষণ করে এবং আমাকে বিয়ে করার ওয়াদা করে। এরপরও সে কয়েকবার সুযোগ সৃষ্টি করে আমাকে ধর্ষণ করে। ইহার পর আমি গর্ভবতী হয়ে গেলে তাকে আমি গর্ভবতী -তা জানাই। তখন থেকে সে আমাকে এড়িয়ে চলে ও আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। তার পরিবারের লোক দিয়ে কবিরাজী ঔষধ খাওয়ে গর্ভের বাচ্চা মেরে ফেলার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
তিনি আরো বলেন, আমার পেটের সন্তান জানান দিচ্ছে মা, আমি আসছি। আমি অসহায় গবীর পরিবারের সন্তান। আমি আপনার কাছে সহযোগীতা ও এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমার গর্ভের সন্তানের পিতার পরিচয় পেতে আমাকে যেন আর মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয় । ঘটনার বিষয়ে বাদীর পিতার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এমন ঘটনার সঠিক বিচার চাই আমি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুদুল সেক ওরফে মাসুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে করিম সেখ দাবি করেন তার ছেলে নির্দোষ।অপর বিবাদী আম্বিয়া বলেন, ঐ মেয়েটির বেশ কয়েটি ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু আমার প্রতি আনিত আভিযোগ মিথ্যা। বাদী, বিবাদীর পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি অসহায় এই মেয়েটির সন্তানের পিতার পরিচয় নিয়ে বেড়ে ওঠুক এবং প্রকৃত দোষীর শাস্তি হোক।