
এম এইচ মুন্না পটিয়া প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের নাম করা কোম্পানি ফুলকলি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে সার্জেন্ট মহি আলম খালের পানিতে ছেড়ে দেয়ায় পঁচা দুর্গন্ধে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের লোকজন ও এলাকাবাসি এবং চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের যাত্রীদের মাঝে অসস্থি দেখা দিয়েছে। খালের কাছাকাছি ইউনিয়ন কৃষি স্কুলের শ্রেণি কক্ষে দুর্গন্ধের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাঁচা পানির কারণে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত একর জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না
কৃষকরা এ কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত এক সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফুলকলি কারখানার কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের মধ্যে বর্জ অপসারণের নির্দেশ দেন। প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় সীমা ছিল ৭ দিন পার হয়ে গেলেও ফুলকলি কোম্পানি কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান জানান, এলাকার কৃষকরা কৃষিকাজ করতে না পারায় ওই কারখানার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য
৭ দিনের সময় বেঁধে দয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় এরই মধ্যে শেষ হলেও তারা কোন ব্যবস্থাই নেন নি। যেকোন সময় ওই কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জানা গেছে, খালের পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। তাতে রাসায়নিক পদার্থথাকায় পানির অভাবে চলতি মৌসুমে তিনশ একরের চেয়ে বেশি ধানি জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই খালে ছেড়ছে। রাসায়নিক পদার্থের কারণে ওই খালে কোন ধরণের মাছ কিংবা জলজ প্রাণী নেই।
বর্ষাকালে পানির বেশি থাকায় দুর্গন্ধ চরম আকারে নজরে না এলেও শুকনো মৌসুম শুরুর সাথে সাথে তা চরম আকার ধারণ করে। জোয়ার-ভাটার এই খালের পানি কয়েকটি শাখা খাল পেরিয়ে তা কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। খালের আশপাশের বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বহু মসজিদের মুসল্লিরা রীতিমত নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারছেন না। কৃষকদের অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে জানা যায় কৃষকের কথা বিবেচনা করে উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন খাঁন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কের পাশে জঙ্গলখাইন এলাকায় শহীদ সার্জেন্ট
মহি আলম নামে খালটি খনন করেন। এই খালের পানি দিয়ে উপজেলার উজিরপুর, নাইখাইন, গৈড়লা, এয়াকুবদন্ডী, তিয়ারকুল, উজিরপুর (পৌরসভার অংশ), ঊনাইনপুরা ও পৌরসভার আল্লাই এলাকার কয়েকশ কৃষক ধানি জমিতে প্রতি মৌসুমে চাষাবাদ করে থাকেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ, মহা সড়কের পাশে পটিয়া শাহগদী মার্কেট এলাকায় কয়েকটি কারখানা এবং জঙ্গলখাইন কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে গড়ে ওঠা ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের বিষাক্ত বর্জ্য খালে ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ও চাষাবাদ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর আগেও কৃষকরা গণস্বাক্ষর করে একটি
অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও তৎকালীন জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ফরিদকে অভিযোগ দেয়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতা চায়লেও কাজ হয়নি।কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয় নি। এই খালে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য প্রবাহিত হওয়ায় এবার বোরো মৌসুমে এলাকার কয়েকশ কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ বলেন, ফুলকলির বিষাক্ত বর্জ্যর কারণে এলাকায় কৃষকদের চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং পরেবেশেরও
ক্ষতি হওয়ার কারণ ফুলকলিকে আমরা শর্তক করে দিয়েছি। কৃষকদের যাতে কোন ধরণের ক্ষতি না হয় সেটা মাথায় রেখে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের পটিয়ার ম্যানেজার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি, গত ২৭ শে মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মুক্তিাদির হাসান জানান ইটিপি অকার্যকর রেখে বাইপাস লাইনের মাধ্যমে বর্জ্য পার্শ্ববর্তী সার্জেন্ট মহিউল আলম খানে নির্গমন করে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে আসছিল।খালে নির্গমন করে
খালের পানি দূষণ করায় ফুলকলি ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডস্টিজ লিমিটেডকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে জরিমানা করার। সে সাথে এক মাসের মধ্যে ইটিপি কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি এক মাসের মধ্যে ইটিপি কার্যকর করা না হয় তাহলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে