নিজস্ব প্রতিবেদক
পাসপোর্ট ছাড়া কাতারে গেলেও দোহার হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। বলে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী কাতারে অবতরণের পর পাসপোর্ট না পেয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এরপর হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ভেতরের হোটেলে ছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী। এখন তিনি কাতারেই অবস্থান করেছেন। খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে
জানিয়েছেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী। এদিকে আজ শুক্রবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এসব কথা বলেন। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী তিনি নিজের ভুলের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩ জুন ডলার এনডোর্স করতে ঢাকার একটি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত একটি ছোট ব্যাগে পাসপোর্টটি ছিল। ব্যাংকের কাজ শেষ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট অপারেশন অফিসে যাই। সেখানে ব্যাগটি রেখে আসি। অফিসের সহকর্মীরা ব্যাগটি দেখে আমার লকারে রেখে দেন।’ তিনি আরো বলেন বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুলের কারণে হয়েছে ফজল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫ জুন রাতে ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দোহায় যান তিনি। ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে তাঁর দুই আঙুলের
ছাপ নেওয়া হয়েছিল। এরপর পাসপোর্টও দেখতে চাওয়া হয়নি। রাতে দোহায় বিমান অবতরণের পর অফিশিয়াল ব্যাগ থেকে খুঁজতে গিয়ে পাসপোর্ট পাননি। তখন দোহা এয়ারপোর্টে বিমানের স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে যোগযোগ করেন।তিনি এ ছাড়া ঢাকায় বিমান অফিসে কথা বলেন। তখন লকারে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত ছোট ব্যাগে পাসপোর্ট রয়েছে বলে জানাতে পারেন। পরে অন্য ফ্লাইটে পাসপোর্টটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাসপোর্ট না থাকায় তিনি দোহা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে যাননি। বিমানবন্দরের ভেতরে অরিক্স এয়ারপোর্ট হোটেলে ছিলেন। তিনি পরদিন ৬ জুন
পাসপোর্ট পেয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। কাতার ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে পাসপোর্টের বিষয়ে ফজল মাহমুদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি বা আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। এমনকি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছেও কোনো অভিযোগ করেনি। কাতার ইমিগ্রেশন বিমান সূত্রে জানা যায়, ফজল মাহমুদ চৌধুরী প্রায় ৩০ বছর ধরে বিমানের পাইলট হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। অভিজ্ঞতার কারণে বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটগুলো তিনিই পরিচালনা করে থাকেন। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘আমার দীর্ঘ পেশাগত জীবনে এ ধরনের ভুল কখনো হয়নি।
পাসপোর্ট না থাকলে বিদেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে ওই যাত্রীকে ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকে। ফ্লাইটে না ওঠা পর্যন্ত ইমিগ্রেশন থেকে বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থাকতে হয়। ৬ মে দোহা বিমানবন্দরে পাসপোর্ট না থাকায় আমি ওখানকার ইমিগ্রেশন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত অরিক্স এয়ারপোর্ট হোটেলে থাকি। পাসপোর্ট পেয়ে ৬ জুন রাতে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি।’পরে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে পাইলট, কেবিন
ক্রুদের জেনারেল ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হয়। এই ফরমে পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হয়। এ ছাড়া তাঁদের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট অবশ্যই সঙ্গে নিতে হয়। এরপর বিদেশে পৌঁছানোর পর ওই দেশের বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হতে হয়।ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে গত বুধবার রাতে বিমানের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের স্টাফদের
জন্য নির্ধারিত হোটেলে যেতে পারেননি তিনি। এরপর কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে আটক করেনি বলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে। এ ব্যাপারের বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ সাংবাদিকদের বলেন, পাসপোর্টবিহীন থাকার কারণে ফজল মাহমুদকে কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটক করেনি। এ বিষয়ে ভুল তথ্য এসেছে।এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মুহিবুল হক গণমাধ্যমকে বলেন,
ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের পাসপোর্টটি কাতারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বদলে বিকল্প পাইলট কাতারে যাচ্ছেন। যিনি ওখানে রয়ে গেছেন, তাঁর দেশে ফিরে আসতে হলেও তো পাসপোর্টটি পাঠিয়ে দিতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না? জানতে চাইলে বিমানসচিব বলেন, ‘তাঁকে পানিশমেন্ট (শাস্তি) দিতে হলেও তো পাসপোর্টটি পাঠাতে হবে। তিনি দেশে ফিরে আসার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’এদিকে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে ‘আটক’ হয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে আজ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ক্যাপ্টেনসহ পাসপোর্টবিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আন্তমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে।কমিটিকে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় দোহা ভ্রমণের কারণ অনুসন্ধান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে দায়দায়িত্ব নিরূপণ এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গঠিত কমিটিতে তিন কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে
একটি প্রতিবেদন দিতে হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করতে কাতার যাওয়া উড়োজাহাজের পাইলটের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে। তাঁর পরিবর্তে বিমানের জ্যেষ্ঠ পাইলট ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজই তাঁর কাতার যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মোহমুদ চৌধুরী বলেন আমাকে কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ এবং আটক করেন নি আমাকে আমাকে শুধু বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে কাতারের দোহা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আমার সাথে কোন দুর্ব্যবহার করেন নি