নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় গতকাল শনিবার নতুন করে ১ জন চিকিৎসকসহ মোট ৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই ৮ জনের ৮ মধ্যে জনই বরগুনার। বাকি ১ জন পটুয়াখালীর। নতুন ৮ জন নিয়ে এই বিভাগে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০১জনে। এর মধ্যে ১০ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী ১৭ জন।করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং একের পর এক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এরই মধ্যে কয়েকটি হাসপাতালকেও লকডাউন করা হয়েছে, আর কিছু হাসপাতালের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভাগের ৩ টি জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি এসব জেলায় চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থার চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, বরিশালে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ১৭ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১০১ জন। এর মধ্যে বরিশালে ৩৬ জন, বরগুনায় ৩০ জন, পটুয়াখালীতে ২০ জন, পিরোজপুরে ৭ জন ও ঝালকাঠিতে ৬ জন। এ ছাড়াও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভোলায় ২ জন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
একটি সূত্র জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ৯ জন,, ১ জন মেডিকেলের ছাত্র, ৪ জন নার্স, ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল শনিবার নতুন করে বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক তরুণ চিকিৎসকের করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছে।গত ১৭ এপ্রিল বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড-৩ তথ্য গোপন করে এক করোনাভাইরাসের রোগী ভর্তি হওয়ার পর ওই ইউনিটে দায়িত্বরত ৯ জন চিকিৎসক, নার্স, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়। এ ঘটনায় মেডিসিন ইউনিটটিকে লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে জেলার বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন চিকিৎসক, ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল থেকে এ ২ টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে লকডাউন করা হয়। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। নতুন করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলেও হাসপাতালটি লকডাউন করা হয়নি। তবে আজ রবিবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আক্রান্তের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে ১ সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাস রোগী বাড়ছে। বরগুনায় গত ৯ এপ্রিল ১ জন করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর সেখানে ১১ এপ্রিল আরও ১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ জনে। বরিশালে গত ১২ এপ্রিল প্রথম ১ করোনা ভাইরাস রোগীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল ১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ছিল ১৪ জন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তা বেড়ে হয় ৩৬ জনে।
পটুয়াখালী জেলায় ৯ এপ্রিল প্রথম শনাক্ত রোগী মারা যাওয়ার পর ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দুজন আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু ২১ এপ্রিল এক দিনে নতুন ৮ জন আক্রান্ত হয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১০-এ। এরপর গত ৫ দিনে আরও ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়। তবে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে ১০ দিন ধরে রোগী সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। ভোলায়ও নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্তের হার বৃদ্ধির পেছনে গ্রামে ফেরত লোকজনের ভূমিকা বেশি। এই ৩ জেলায় আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তদের ৭০ ভাগই নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা এবং সাভার থেকে ফেরা শ্রমিক। বাকিরা তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আজ রবিবার সকালে এবিটিভিকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুরা হাসপাতাল লকডাউন হবে না। প্রয়োজনে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য এলাকার চিকিৎসক এনে সাময়িক কার্যক্রম চালু রাখা হবে। তিনি এসময় আরো বলেন এভাবে চিকিৎসক আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ধস নামতে পারে তাই সময় থাকতে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং করোনাভাইরাসের যে কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।