এবি টিভি ডেস্কঃ
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, আমাদের বাংলাদেশে গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালনা করা ফ্ল্যাইট বন্ধ করে দিয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ এক মাস এর বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
আগামী ৮ মে থেকে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী ধারণ ক্ষমতার থেকে কম যাত্রী নিয়ে এবং ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৭৫% যাত্রী বহন করবে এয়ারলাইন্সগুলো এ সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এয়ারলাইনসগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে এসময় এয়ারলাইন্সে ভবন করার সময় যাত্রীদের অবশ্যই হ্যান্ড গ্লাভস মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক।
তবে এয়ারলাইন্সগুলো কোন কোন দেশে যাবে সেটি এখনো নিশ্চিত করেননি অভ্যন্তরীণ রুটের কথা বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেশগুলো ব্যতীত ফ্লাইট পরিচালনা করবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয় যেসব দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ওইসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রায় গত দেড় মাস বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীণ আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল করতে পারে ৮ মে থেকে সীমিত পরিসরে এ কথা জানিয়েন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) বলেছে, সবকিছু নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির ওপর। বেবিচকের অনুমোদন পেলে শিগগিরই টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে।
আজ শনিবার বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট সীমিত পরিসরে চলবে। প্রতিটি ফ্লাইটে ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ যাত্রী নেওয়া হবে। ফ্লাইট সংখ্যাও কম থাকবে। এ জন্য দেশের বিমানবন্দরগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কীভাবে ফ্লাইটগুলো চলবে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেবিচকের কাছে একটি পরিকল্পনাও দিয়েছে এওএবি। এ নিয়ে ২৯ এপ্রিল তাদের মধ্যে বৈঠকও হয়। ৭৫ শতাংশ যাত্রী থাকবে প্রতি ফ্লাইটে
প্রতি ঘণ্টায় চলবে তিনটি ফ্লাইট, প্রতিটি ফ্লাইটের আগে থেকে জীবাণুমুক্ত করা হবে, ফ্লাইটে যাত্রীদের নতুন গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হবে। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়াও তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা—ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। অভ্যন্তরীণ আকাশপথে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো ৮০ শতাংশ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে এই চারটি বিমান সংস্থার অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ১৪০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করত। এসব ফ্লাইটে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন।
সব ফ্লাইটই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে চলাচল করে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী ছিল ৪৪ লাখ ৮২ হাজার। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ২৫ হাজার। অর্থাৎ ১ বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ২ রুটেই মোট ৭ লক্ষ যাত্রী বেড়েছিল। যাত্রী বাড়ার কারণে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যায় বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে। বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে উড়োজাহাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি করে তারা। চলতি বছর একাধিক উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে আগামী জুন মাসের মধ্যে আসবে নতুন ৩টি নতুন ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৮শ কোটি টাকার বেশি বাজার আছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে যাত্রী হারাতে থাকে বিমান সংস্থাগুলো। মার্চে যাত্রী কমে যায় ৪০ শতাংশ। ২১ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক আকাশপথের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আকাশপথেও ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বেবিচক। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৭ মে পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে জানা যায়।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের ৮টি রুটে প্রতিদিন ৪০টির মতো ফ্লাইট চালু থাকতে পারে। প্রতি ঘণ্টায় ৩টির বেশি ফ্লাইট ছেড়ে যেতে পারবে না বলেও জানান তিনি। বিমানবন্দরের রানওয়েতেও উড়োজাহাজগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করবে। সর্বোচ্চ ৫০ জন বা ৭৫ শতাংশ যাত্রী প্রতিটি ফ্লাইটে থাকবে। ৩টি ফ্লাইটের বেশি যাত্রী একসঙ্গে বিমানবন্দরে টার্মিনালে থাকতে পারবেন না।
টার্মিনালের ভেতরেও সামাজিক দূরত্বে বজায় রাখবে যাত্রীরা। প্রতিটি বিমান সংস্থার যাত্রীদের জন্য আলাদা জায়গা চিহ্নিত করা থাকবে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের মাস্ক ও গ্লাভস বদলে এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে নতুন গ্লাভস দেওয়া হবে। এগুলো পরেই তাঁদের ফ্লাইটে যেতে হবে। উড়োজাহাজের ভেতরেও সামাজিক দূরত্বে আসনে বসতে হবে। যাত্রীদের পাশাপাশি উড়োজাহাজগুলোকেও জীবাণুমুক্ত করে প্রতিটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে।