ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ নির্মূলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন !!
নিজস্ব প্রতিবেদক। অজানা বাংলাদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিশেষ করে সংঘর্ষ এক ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। জীবনের নিরাপত্তা এক নৈরাজ্যময় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ক’দিন পর পর জেলার বিভিন্ন উপজেলার কোন না কোন এলাকায় ঘটছে সংঘর্ষ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা। যা প্রতিনিয়ত খবরের শিরোনাম হয়।
মাঝে কিছু দিন হয়তো এর প্রকোপ কমে, কিন্তু পুনরায় এটি আরও ভয়াবহ রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
এই জেলায় জনসাধারণের জীবনের নিরাপত্তা বা সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অঙ্গীকার রয়েছে। তারা (জনপ্রতিনিধি) নির্বাচনী ইশতেহারে সমাজে সন্ত্রাস নির্মূল করাকে প্রধান দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।কিন্তু কার্যক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা সন্ত্রাসকে উৎসাহিত না করলেও অবস্থার কোনো হেরফের হচ্ছে না, সমাজে সন্ত্রাস রয়েই যাচ্ছে, বরং প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে দিনে দিনে।
সংঘর্ষ রোধের জন্য এখানকার প্রশাসন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা ও সচেতনতা তৈরি সহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও সংঘর্ষ সাময়িক বন্ধ হলেও সম্পূর্ণ বন্ধ হচ্ছে না। অনেক সময়ে সাময়িক বন্ধ থাকাটাকে কেউ কেউ ঝড়ের পূর্বাভাসও মনে করে। এত কিছুর পরও এবং সংঘর্ষ নির্মূলে প্রশাসনের যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেন সংঘর্ষ দাঙ্গা -সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না, এটি আজ সর্বত্র বড় প্রশ্ন। তাহলে কি মনে করতে হবে, সংঘর্ষ, দাঙ্গা ও সন্ত্রাসের কারণ আরও গভীরে প্রোথিত !
এটা ঠিক, এ অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বিগত কয়েক বছরে এটি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ডালপালা নিয়ে সমাজের অতি গভীর শেকড়ে গেড়ে বসেছে। তাই এত সহজে ও অল্প সময়ে এটিকে নির্মূল করা যাচ্ছে না। শুধু পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এ কঠিন কাজ করা অসম্ভব। সংঘর্ষ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
এখানকার সংঘর্ষ দমনে শীর্ষ জনপ্রতিনিধিগণ, প্রশাসন ও থানাপুলিশের কর্তাব্যক্তিদের কারো মধ্যে আমরা আন্তরিকতার বা যোগ্যতার অভাব দেখি না। হতে পারে, কিছু সংখ্যক গ্রাম্য নেতাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। কিন্তু এদের সংখ্যা এত নগণ্য যে, সংঘর্ষ ও নৈরাজ্য দমনে খুব একটা বাধা হওয়ার কথা নয়। তাহলে সংঘর্ষ সন্ত্রাস দমন হচ্ছে না কেন ? সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সমস্যার গভীরে গিয়ে আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে না পারলে সংঘর্ষ বা সন্ত্রাস এত সহজে দমন করা যাবে না। সমাজ বা জনজীবন থেকে সংঘর্ষ নামক এই ব্যাধি দূর করতে কয়েকটি স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বলতে কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে উল্লেখ করা যেতে পারে। সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। পদক্ষেপগুলো হলো-
১। ইউনিয়ন ও বড় গ্রামগুলোকে কতগুলো ব্লকে বিভক্ত করে এক একজন প্রথমশ্রেণীর অফিসার এবং পুলিশ কর্মকর্তার অধীনে ন্যস্ত করা। তারা নির্ধারিত ব্লকের বসবাসরত মানুষের নানা সুবিধা -অসুবিধা নিয়ে মতবিনিময় ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কারণ এ যাবতকালে এখানে যতগুলো দাঙ্গা সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে, সবই সামান্য ও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে।
২। ব্লকের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ঘরবাড়িতে তাৎক্ষণিক তল্লাশি চালিয়ে ঘরে রক্ষিত দেশীয় অস্ত্র (টেটা, বল্লম, রামদা, ধারালো অস্ত্র সমূহ) উদ্ধার এবং প্রয়োজনবোধে তাদের আটক করবেন। এই প্রক্রিয়া কোনো বাধাধরা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। অপরাধীদের বুঝতে দিতে হবে সাময়িক গা-ঢাকা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এই অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া তাদের কোনো ভিন্ন পথ নেই।
৩। সমাজে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। ফলে কোনো কোনো সচ্চরিত্রের অধিকারী যুবকও জীবিকার তাগিদে অসৎ পথে পা বাড়ায়। পরিবারের আর্থিক সংকট দেখে বেকার যুবক আর স্থির থাকতে পারে না, তাই জোরজবরদস্তিমূলক কাজে একসময় তাদের উৎসাহ বাড়ে এবং অসৎ পথে পা বাড়াতে প্রলুব্ধ করে। তাই অবিলম্বে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সহ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৪। যুবকদের ছোট ছোট ব্যাংক ঋণ দিয়ে ছোট ছোট শিল্প-কারখানা, নার্সারি গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী করা যেতে পারে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। কেউ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরে বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ অবিলম্বে কার্যকরী করা প্রয়োজন এবং তা সম্ভবও। কিন্তু এগুলোর সাথে সামাজিক কিছু গর্হিত কার্যাবলী দূরীভূত করা প্রয়োজন, অন্যথায় স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে প্রাপ্ত সুফল ধরে রাখা দুষ্কর হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক। অজানা বাংলাদেশ
আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।।