
বাড়ির সকলেই কাঁদছিলেন ! যে যার মতো করে বিলাপ করছিলেন। নির্জন বাড়িটি মুহূর্তের মধ্যে লোকারণ্যে ভরপুর হয়ে উঠল। এত মানুষের ভিড়ে ছোট্ট মেয়েটি তার নিজস্ব ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল। তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিষয়টি কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না। সত্যি সত্যিই কি তার প্রিয় বাবা, পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন? তিনি কি আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না? তার প্রিয় নাম ধরে কখনও ডাকবেন না।
মেয়েটির দৃঢ়বিশ্বাস, বাবা হয়তো অভিমানে চোখ বন্ধ করে আছেন। তিনি আবার চোখ খুলবেন। মেয়েটিকে হাত বাড়িয়ে কাছে টানবেন। মেয়ের বায়নাগুলো শুনে একটু হাসবেন। বায়না পূরণের আশ্বাস দেবেন। মাহে রমজানের দিনগুলোতে বাবার পাশে বসে সে ইফতার করবে। বাবার মুখ থেকে শুনবে রোজার ফজিলত। শেষ রোজার দিকে বাবার হাত ধরে যাবে ঈদের কেনাকাটা করতে। কত কি শখের পণ্য কিনবে বলে বাবাকে বিব্রত করবে। বাবা মেয়েটির সব আবদার নীরবে মেনে নেবেন। তার মধ্যে যতটা সম্ভব সব একে একে কিনে দেবেন। একবারও বাবা নিজের জন্য কিছু কেনার কথা ভাববেন না। পকেটে খুচরা টাকা না থাকলেও আদুরে গলায় মেয়েকে বলবেন, কিছু খাবে ! মেয়েটি ছোট্ট হলেও বুঝতে পারত বাবার সাধ-সাধ্যের তফাৎ। তাই মুখে কোনো কথা না বলে রিকশা ভাড়া বাঁচাতে পথ ধরে হেঁটে চলত।
সেই মেয়েটির বয়স বেড়েছে। তার বেড়েছে বাস্তবজ্ঞান। সে এখন বোঝে সেদিনের সবার কথাই সত্য ছিল। বাবা আর কোনো দিন তার কাছে ফিরে আসেনি। সেই প্রিয় নামে কেউ কোনো দিন তাকে ডাকেনি। সে-ও পারেনি কোনো একজনকে বাবা বলে ডাকতে। তবু সে তার দৃঢ় বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি। তার ধারণা, বাবা আছেন, অগণিত মানুষের মধ্যে। তারা শুধু পিতৃত্বকেই বড় করে দেখেন না, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বকেও গুরুত্বসহকারে নিয়ে থাকেন। শুধু নিজ সন্তানদের অভিভাবকত্বকে গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হন না। পৃথিবীর সব সন্তানের দায়িত্ব নিজ দায়িত্বে আপন করে নেন। সম্পর্কের গণ্ডিতে নিজেকে বন্দি রাখেন না। আপন অস্তিত্বকে ছড়িয়ে দেন পৃথিবীর সব সন্তানের মধ্যে। যারা পিতৃহারা হয়েও সব হারাদের ভিড়ে তলিয়ে যান না। পান বটবৃক্ষের ছায়াতুল্য অদেখা কোনো পিতার আশীর্বাদ। সেই অদেখা পিতার প্রতি রইল শত সহস্র সালাম, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।