বাঁশখালীতে সাংবাদিককে মাদক-মামলায় ফাঁসানোর-চেষ্টা’এসআই শহীদ গত ২৭ মার্চ রাত ১১টা বাঁশখালী উপজেলা সদর থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন সংবাদকর্মী মনছুর আলম প্রকাশ এম আলম। মনছুরের মোটরসাইকেলটি কালীপুর সদর আমিন হাট এলাকায় পৌঁছালে পথরোধ করেন রামদাশ মুন্সী হাট তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদ। এসময় তল্লাশির নামে মনছুরকে আটক করেন এসআই শহীদ। উল্লেখ্য, সংবাদকর্মী মনছুর কক্সবাজারের স্থানীয় দৈনিক আপন কন্ঠের বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক মেহেদী এর সাবেক চীফ রিপোর্টার, জাতীয় দৈনিক আমার সময়ের, সাবেক কক্সবাজার শহর প্রতিনিধি।
জাতীয় অনলাইন পরিকল্পিত বার্তার প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক এবং বাঁশখালী নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়াও কক্সবাজার সিটি প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক, কক্সবাজার জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ও বিএসকেএস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক।এসময় কোত্থেকে এসেছে, কোথায় থাকে—এমন প্রশ্ন করে এবং মদ্যপান করে মাতলামি করার অভিযোগ তুলে সংবাদকর্মী মনছুরকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
পরে সেখান থেকে ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টে দেখানো হয়, মনছুর মাদকসেবি। যদিও বাঁশখালী উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিউর রহমান মজুমদারের দাবি, বাঁশখালীতে ডোপ টেস্ট করানোর মতো কোনও যন্ত্রপাতি নেই। এখানে পরীক্ষা করানোর মতো কোনও ব্যবস্থা নেই।
সচেতন মহলের প্রশ্ন, বাঁশখালীতে মাদকসেবিকে পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা না থাকলেও উপপরিদর্শক শহীদ মেডিকেল রিপোর্টটি পেলেন কোত্থেকে? তাছাড়া অফ ডিউটিতে কেন সাদা পোষাকে মোটরসাইকেল যোগে শহীদ সেখানে অবস্থান করছিলেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদ সাংবাদিককে বলেন, ‘গাঁজা খেয়ে হাঁটতে পারে না। পাবলিক দিয়ে ধরে তাঁকে গাড়িতে উঠিয়েছি। তাঁকে বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। আমার কাছে ডাক্তারি স্লিপ আছে। অবশ্যই ডোপ টেস্ট করিয়েছি।’ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বলেছেন, সেখানে ডোপ টেস্ট করানোর মতো কোনও ব্যবস্থা নেই, আপনি কিভাবে ডোপ টেস্ট করলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো ভাই ডাক্তারের বিষয়। টেস্ট করেই তো সার্টিফিকেট দিয়েছে আমাদেরকে।’
তখন তো আপনার অফ ডিউটি ছিল, আর সংবাদকর্মী মনছুর যদি অপরাধী হয়, ডিউটিরত অফিসারকে ডেকে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অফ ডিউটি বললো কেডা? আমরা তো জিডি মূলে বের হই, আর হাজির হই। আপনি জিডি দেইক্কা যান। জিডি আছে তো। আমরা একটা মাদক অভিযানে ছিলাম। আমার সাথে আরও অফিসার ছিল আর সঙ্গীয় ফোর্স ছিল।’
তিনি তো ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নন, মামলাও নেই। আর মানুষকে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়েছেন, তাহলে হ্যান্ডকাপ পরালেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদক সেবন করলে কি আসামি নয়? মাদক সেবন করা তো অপরাধ। আসামীকে কেন ছেড়ে দিলো তা জানতে চাইলে বলেন, সেটা ওসি সাহেবের বিষয়। ওসি সাহেব তো ইচ্ছে করলেই আসামিকে মুচলেকার মাধ্যমে জামিন দিতে পারেন। ওসি সাহেব প্রথম বারের মতো ক্ষমা করে দিয়েছেন আর কি।’
এদিকে ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী মনছুরের দাবী তার কাছ থেকে কোন মুচলেকা নেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র আত্মীয়ের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে উপপরিদর্শক শহীদের বক্তব্যের সাথে মিল পাওয়া যায়নি রামদাস মুন্সী হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বাকি ৩ পুলিশ কর্মকর্তার। তাদের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে। এএসআই মিঠুন চক্রবর্তী ডিউটিতে থাকলেও আইসি সোলায়মান দাবি করেছেন জ্ঞানময় চাকমা ডিউটিতে ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একই তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জ্ঞানময় চাকমা ‘জাতীয় সাপ্তাহিক অপরাধ ঘোষণাকে’ বলেন, ‘তখন আমার ডিউটি ছিল তা কে বলছে আপনাকে? তখন তো আমার ডিউটি ছিল না। এ ধরনের অভিযানে আমি যাইনি। আমি ওই ঘটনা সম্পর্কেও জানি না। তখন মনে হয় মিঠুন ডিউটিতে ছিলেন।’তবে এএসআই মিঠুন চক্রবর্তী ঐ রাতে ডিউটিতে ছিলেন বলে জানান এবং তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তখন আমার ডিউটি থাকলেও আমি বাহিরে ছিলাম। ওখানে আমাদের শহীদ স্যার ছিলেন। এ বিষয়ে আমাদের আইসি স্যারের সাথে কথা বলেন আপনি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামদাস মুন্সীর হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. সোলায়মান বলেন, ‘যার ডিউটি ছিল সেও গেছে। আর শহীদও গেছে। তখন এএসআই জ্ঞানময় চাকমা ছিল। অফিসার ইনচার্জের কিছু স্পেশাল পাওয়ার আছে। ওনাকে হ্যান্ডকাপ পরাইছেন, টেস্ট করাইছেন, আবার কি মূলে ছাড়ছেন; এসব অফিসার ইনচার্জের কাছ থেকে জেনে নিবেন। আপনার নিউজ করার সময় অফিসার ইনচার্জের কোড লাগবে না? ওনার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করুন। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, অফিসার ইনচার্জ কি বলেছিলেন? হ্যান্ডকাফ পড়ানোর জন্য কিংবা টেস্ট করানোর জন্য অথবা একজন সংবাদকর্মীকে হয়রানি করার জন্য!
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ আইনের পিআরবি-৩৩০ বিধি মতে, কোন অসুস্থ মানুষ কিংবা সাংবাদিককে অভিযোগ অথবা মামলা ব্যতিরেকে পুলিশ হেফাজতে নিলে হাতকড়া লাগানোর বিধান নেই। এছাড়া পিআরবি-৯৫১ বিধি মতে, দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের পোশাক পরিহিত থাকতে হবে। অভিযোগ আছে, উপপরিদর্শক শহীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ভুক্তভোগী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও এখনো বহালতবিয়তে রয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে হয়রানির শিকার হওয়া অনেকে ইজ্জত হারানোর ভয়ে মুখ খুলেননি।
জানা গেছে, কয়েকজন ভুক্তভোগী জেলা পুলিশ সুপার ও আইজিপি বরাবর উপপরিদর্শক শহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন।ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন সংবাদকর্মী মনছুর আলম। সেই থেকে শহীদের টার্গেট মনছুর আলম। বিভিন্ন সময় মনছুরকে একা পেয়ে ফাঁসাতে চেয়েছেন এসআই শহীদ। বিষয়টি বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিনকে জানিয়েছেন মনছুর। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নোবেল দাবী করেন, সংবাদকর্মী মনছুরের সাথে এসআই শহীদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি বাঁশখালী থানার ওসিকে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনছুর আলম বলেন, বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পেয়ে আমি দীর্ঘদিন গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীতে অবস্থান করে আসছি। এরমধ্যে বাঁশখালী থানাধীন রামদাস মুন্সি হাট তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শহীদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন মহল বরাবর করা বিভিন্ন ভুক্তভোগীর অভিযোগকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় আমার সাথে। এরপর থেকে এসআই শহীদ আমাকে বিভিন্ন সময় ফাঁসানোর চেষ্টা চালালে বিষয়টি আমার সিনিয়র সাংবাদিকের মাধ্যমেও ওসিকে জানিয়েছি। ঐদিন আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসআই শহীদ ঘটনাস্থলে মোটর সাইকেল যোগে অবস্থান করেন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের উপস্থিতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসআই শহীদ আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলেও কোন পরীক্ষা করানো হয়নি।