
বেকারত্ব নিরসনে সমাধান যাত্রায় উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন। দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সময়কালে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও ধারণা অর্জনের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রান্তিক তরুণদের মানসম্মত শিক্ষা-দক্ষতা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সংস্কৃতি-ক্রীড়া চর্চা ও মানব সম্পদের মতো সামাজিক অগ্রগতির সূচকগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত জরুরি। জাতিসংঘ প্রদত্ত এসডিজি অর্জনে ও অর্থনীতির চালিকা শক্তিরূপে তরুণ উদ্যোক্তারাই প্রাগ্রসর ভূমিকা রাখতে
পারে। এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র উদ্যোগে “তরুণদের উন্নয়ন ও বেকারত্ব নিরসনে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম’র অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো: নুরুল আলম নিজামী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র কনফারেন্স হলে গত ৭ এপ্রিল এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ছিলেন, ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. বদরুল হুদা খান, ইউএসটিসি’র প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডা: প্রভাত চন্দ্র বড়–য়া, চট্টগ্রাম
সিটি কর্পোরেশন’র কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, উদ্যোক্তা রওশন আরা চৌধুরী, শিক্ষক প্রশিক্ষক শামসুদ্দিন শিশির, চট্টগ্রাম মহিলা টিটিসি’র প্রিন্সিপাল শরীফুল ইসলাম, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তানভীর শাহরিয়ার রিমন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র চেয়ারম্যান আহছান হাবিব, লেখক সৈয়দ মো: জুলকরনাইন, ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ’র কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ, এনজিও কর্মী সোহাইল আক্তার খান, নাছিমা শওকত, নেছার আহমেদ
খান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-চট্টগ্রাম’র মাস্টার ট্রেইনার জসিম উদ্দিন চৌধুরী, এ্যাকশন এইড’র প্রতিনিধি ফরহাদুর রহিম, সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন পরিষদ’র সভাপতি ওসমান ফারুকী হিমাদ্রী, তরুণ উদ্যোক্তা এম এ হোসেন বাদল, বৃটিশ কাউন্সিল’র প্রশিক্ষক আফসানা জাহান, ডেল্টা লার্নিং সেন্টার’র সিইও মো: আলমগীর, সেহের অটিজম সেন্টার’র পরিচালক তাবাসসুম জেরিন, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সম্পাদক দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, এ্যাবাকাস’র প্রতিষ্ঠাতা রাসেল আহমেদ, রোটারেক্ট ওয়াহিদ মুরাদ, নগরফুল’র সভাপতি বায়েজিদ সুমন, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সদস্য
ফাইজা তাসনিয়া প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার বলেন- বাংলাদেশে বেকারত্ব আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। বিশেষত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ শ্রমবাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসামঞ্জস্য। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার দৃঢ় সংযোগ প্রয়োজন। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি’র বৃত্তে আবদ্ধ
বাংলাদেশের অর্থনীতি। বেকারত্বের ফলশ্রুতিতে তারুণ্যের বিরাট অংশ অসৃজনশীল ও অনুৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত। তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বা কর্মসংস্থান তৈরীর ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তাও সুলভ নয়। সকল যুব জনগোষ্ঠির জ্ঞান, উদ্ভাবন ও উদ্দীপনার সঠিক ব্যবহার অত্যধিক গুরুত্বপূণ এতে দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি নিজস্ব ভবিষ্যৎ জীবন গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে উৎপাদনশীল তরুণ সমাজ তৈরী হতে পারে। সরকারকে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজতর নীতিমালা প্রণয়ন ও উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও কার্যকর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অর্থবহ
ভূমিকা রাখা জরুরি। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে রাষ্ট্রের পক্ষে সকলের জন্য শোভন কাজ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে অসংখ্য উদ্যোক্তা তৈরীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উদ্যোক্তাদের তহবিল সংকট, প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নীতিমালা আরো সহজতর ও উদ্যোক্তাবান্ধব হওয়া দরকার। উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন উপায় জানান দেওয়া আবশ্যক। নতুন উদ্যোক্তাগণকে প্রণোদনা প্রদান ও নতুন বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরী করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে সফল হতে যুবদের জন্যে মানসম্মত প্রশিক্ষণ ব্যবহারের
মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তরুণদের জোরালো অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা পালন নিশ্চিত করতে হবে। গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের অদম্য প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে বিশেষ উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে “রাইড শেয়ারিং” কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে । ব্লু ইকোনমিতে তরুণরা সহজে ব্যবসা করার সুযোগ গ্রহণ করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রসারিত হবে। বেকারত্ব শূণ্যের কোটায় আনয়নে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আয়বর্ধক ও উৎপাদনমুখী খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে তোলা এবং
উদ্যোক্তাদের অগ্রগামী ভূমিকা নিশ্চিত হলে অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, নতুন নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি, তরুণ উদ্যোক্তাদের সংরক্ষণমূলক সহযোগিতা প্রদানের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র প্রয়াস।