
ছাতক প্রতিনিধি:
ছাতকে নৌপথে চাঁদাবাজির ঘটনার জের ধরে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাব উদ্দিন (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি পৌরসভা বাগবাড়ী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের ছেলে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলাগুলিতে থানার ওসি, ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত ছাতক থানার ওসি মোস্তাফা কামালসহ গুলিবিদ্ধ অন্তত ২০জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শহরে প্রায়
ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ ও গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫২ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষোপ করে। এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টা থেকে পুলিশ এক সাড়াশি অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাগবাড়ী আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৮জনকে আটক করে পুলিশ এসল্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার সুনামগঞ্জ জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। শহরের পরিস্থিতি থমথমে হওয়ায় অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা যায়, ছাতকের সুরমা, চেলা ও পিয়ান নদীর বিভিন্ন স্থানের চলন্ত নৌযান থেকে
নির্ধারিত বৈধ চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ নামে-বেনামে অতিরিক্ত চাঁদা চলছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় পাথর-বালু ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী ও চাঁদা আদায়কারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছিল। ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে নৌপথে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই বিরোধের জের ধরেই গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাপাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলি। এ সময় ছাতক বহুমুখী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জালালীয়া মাদরাসা এলাকা পর্যন্ত গুলাগুলিতে পূরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। চারদিকে আতংকে বন্ধ হয়ে যায় শহরের সকল দোকান-পাঠ ব্যবসা প্রতিষ্টান। বন্ধ হয়ে পড়ে ছাতক-সিলেট সড়কের যান চলাচল। সংঘর্ষের শুরুতেই একটি পেশাদার অস্ত্রধারী গ্র“প বন্দুক নিয়ে পৌরসভা মেয়র-কাউন্সিলদের পক্ষের বিরুদ্ধে বন্দুক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে দ্রুত ছাতক থানার ওসির
নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ব্যাপক লাটিচার্জের পাশাপাশি পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ওসি মোস্তফা কামাল, উপ-পরিদর্শক সৈয়দ আব্দুল মান্নানসহ ৫ পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরমধ্যে ওসিহ দু’কর্মকর্তার পায়ে গুলি বের করতে অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সংঘর্ষে পুলিশ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ অন্য আহত ফরহাদ চৌধুরী, আবুল খয়ের টুটুল, সোহাগ দাস, শিবলু মিয়া, সমরুল হোসেন সাজুসহ ২০জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সুনামগঞ্জ থেকে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে রাত ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। সংঘর্ষ চলাকালে বুকে গুলিবিদ্ধ ভ্যান চালক শাহাব উদ্দিনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষের পর শহর এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও পুরো শহর জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছাতক-দোয়ারাবাজার (সার্কেল) বিলাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ সুপার বকত উল¬াহ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শহরে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে।