মোঃ তাজুল ইসলাম মিয়াজী
নিউজ প্রবাসী ডেস্ক :
দক্ষিণ আফ্রিকার সয়েটোতে ভিনদেশীদের ব্যবসায়ীক সুযোগ আর থাকছে না
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের সবচাইতে বড় লোকেশন হচ্ছে সাউথ ওয়েষ্ট টাউনশীপ যার নাম সংক্ষেপে “সয়েটো”। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৬৩ সালে সয়েটো জোহানেসবার্গ মিউনিসিপালিটির আওতায় আসে।
জনসংখ্যার দিক থেকে সাউথ আফ্রিকায় সয়েটো সবচাইতে জনবহুল এলাকা। প্রায় ২০০ কিলোমিটার আয়তনের এই এলাকাটিতে দেড় মিলিয়নের ও অধিক লোকের বসবাস।
এই সয়েটোতেই বাংলাদেশী সহ বিদেশীর সংখ্যা অনন্তত ৩০ হাজার। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম একটি স্থান ।
দীর্ঘদিন থেকে বিদেশী নাগরিকেরা সয়েটোতে ব্যবসা বানিজ্য করে আসছে। সেখানে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, বেশিরভাগই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে প্রবাসীরা। স্থানীয়ভাবে কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গ সহ সাধারণত ছোট খাট কোন ব্যবসা বানিজ্য করতে তাদের কে দেখা যায় না।
তাই সেখানে সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে প্রবাসীরা। অন্যান্য বিদেশীর পাশাপাশি এই এলাকায় বাংলাদেশীদের দোকান রয়েছে অন্তত ৬/৭ হাজার।
জোহানেসবার্গের সবচাইতে অপরাধ প্রবন এলাকার মধ্যে সয়েটো অন্যতম।যেমন চুরি,ডাকাতি,খুন,বিদেশীদের দোকানে হামলা ও লুটপাট সহ এমন কোন ঘটনা নেই যা সংঘটিত হয়না ।
এই সয়োটেতে।বিশেষ করে প্রতি বছরেই কোন না কোন অজুহাতে এলাকাবাসী বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে মিউনিসিপালিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।এই সময় মিছিল মিটিং থেকে ভাংচুর ও লুটপাট করে বিদেশীদের দোকানপাট।
এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত দশ বছরে শুধুমাএ সয়েটোতেই খুন হয়েছে বাংলাদেশী সহ যেমন ইতুপিয়া সোমালিয়ান নাইজেরিয়ান পাকিস্তানি নাগরিক সহ অন্তত প্রায় ৩৫০জন ।
পূর্বের নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী,বিদেশী ব্যবসায়ীদের সোয়েটোতে থাকতে দেয়া হবে কিনা এবং হোম আফেয়ার্সকে বিদেশী ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে মেমোরেন্ডাম দেয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেছে সোয়েটোর স্থানীয় কমিউনিটি নেতা, দোকান মালিক এবং স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা।
আজ ডিকলোপে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এই বৈঠকে। বিদেশীদের থাকা না থাকা নিয়ে সবার মতামত চাওয়া হলে প্রায় ৭০ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ থাকার পক্ষে রায় দেয় বলে জানা গেছে। এসময় হোম আফেয়ার্সকে বিদেশীদের কাগজপত্র যাচাই বাচাই করা সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোজ খবর রাখতে একটি মেমোরেন্ডাম দেয়া হয়।
ডিকলোপ পুলিশ স্টেসনের ক্যাপ্টেইন প্রবাসে বাংলাকে জানান, আজকের মার্চ ছিল মূলত হোম আফেয়ার্সকে কেন্দ্র করে। তবে আমরা স্থানীয়দের কর্মকান্ডে নজর রাখছি।
ক্রাইম ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চের আরেক ক্যাপ্টেইন জানান, মিটিং শেষে তাদের একটি অংশ বিদেশীদের দোকানে হামলা চালাতে চেষ্টা করলে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারগ্যাস মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এই পরিস্থিতিতে আতংকিত বাংলাদেশী অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে শহরে চলে আসেন। গতমাসে দোকান ভাংচুর হওয়া নিঃশ্ব ব্যবসায়ীরা দোকানে ফিরতে শুরু করেন চলতি সপ্তাহে। তবে পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় আবারো তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য,বিদেশী নাগরিকের দোকানে মেয়াদ উওীর্ন ও ভেজাল খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করে এক শিশু সহ ও এক সোমালিয়ান নাগরিকের গুলিতে একজন স্কুল ছাএ নিহত হওয়ার অভিযোগে পুরো সয়েটোতে বিদেশী নাগরিকদের দোকানে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাট হয় প্রায় এক হাজারেরও অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।গত একমাস থেকে হামলা ও লুহটপাটের শিকার হওয়া বাংলাদেশী সহ কোন বিদেশী নাগরিক এই পর্যন্ত ফিরে যেতে পারেনি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।এবং আর ফিরে যেতে পারবে কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহও তৈরি হয়েছে।
গত কয়েকদিন থেকে সয়োটেতে স্পাজা সপ মালিক সমিতি নামে একটি সংঘটন বিদেশীদের সয়েটো থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সরকার,পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের সহযোগিতা কামনা করছে।
ইতিমধ্যেই সয়েটো এলাকার বিভিন্ন কমিউনিটি সংঘটন ও স্পাজা সপ মালিক সমিতির সাথে যোগ দিয়েছে।তারা উভয়ে জোহানেসবার্গ পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের উচ্ছ পর্যায়ে মিটিং করেছে।তাদের একটাই দাবী কোন বিদেশী সয়েটোতে আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবেনা।এই দিকে কমিউনিটির অপর একটি গ্রুপ বিদেশীদের পক্ষ অবলম্বন করে বলেছে,সয়েটো থেকে বিদেশীদের তাড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা হচ্ছে এটা মানবাধিকারের চরম লংঘন।কারণ সাউথ আফ্রিকার গনতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সকল ধর্ম বর্নের মানুষের জন্য উমুক্ত।
খবর নিয়ে জানা গেছে, আজ সকালেও অনাখাঙ্কিত ভাবে সয়েটোর বিভিন্ন এলাকায় বিদেশীদের দোকানে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। তাই সয়েটোতে বসবাসকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে।তারা আশংকা করছে আগামীতে সয়েটোতে আর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা যাবেনা বলে চিন্তিত রয়েছে।