আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও প্রায় একবছর যাবত এটি গ্যারেজবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। রোগীর প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে গেলে কর্তৃপক্ষ জবাব দেন চালক নেই। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির হিসাব শাখা বলছে চালক মোঃ মোক্তার হোসেন বেতন নিচ্ছেন প্রতিমাসেই।
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোঃ আনাস ইবনে মালেক। তিনি জানান, এখানে দীর্ঘ দিন ধরেই চালক আছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো এ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ বছর যাবত বিকল থাকায় এখানকার রোগীরা সেবা পায়নি। তবে চালক মোক্তার হোসেন অলস-অবসরে বসে থেকেই সময় কাটাতো। প্রায় একবছর আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ আসে।
শুনেছি চালক মোক্তার হোসেন অসুস্থ। তাই নতুন এ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ দিন গ্যারেজে রয়েছে। রোগীদের সেবাই তা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে চালক তার বেতন প্রতিমাসেই নিচ্ছেন। তাছাড়া চালক মোক্তার হোসেনের বড় ভাই মোঃ মোস্তাক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক। বিষয়টি এখানকার সকলেই অবগত আছেন, তাই এর বেশী আরএমও আর কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালক মোক্তার হোসেনের বাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই। তিনি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং তার বড় ভাই সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক হওয়ায়, তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বাড়িতে টানা প্রায় সাতবছর অলস-অবসরে বসে থেকেই মোক্তার হোসেন তার সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।
যার কারণে অযত্নে অবহেলা ও ব্যবহার না করায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আগের এ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কমপ্লেক্সের ভিতরেই একটি গাছতলায়।
তবে চালক মোক্তার হোসেনের দাবি, তিনি সত্যিই দীর্ঘ দিন যাবত অসুস্থ। বেতন উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি জানান, চাকুরী আছে তাই বেতন নিচ্ছি।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে নতুন এ্যাম্বুলেন্স যুক্ত হওয়ার পর দু’তিনবার রোগীর কাজে ব্যবহার হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্সটির ডিজিটাল নম্বর প্লেট এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। কয়েকমাস আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাতা মূমুর্ষ অবস্থায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে জরুরিভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
তখন এ্যাম্বুলেন্সটির খোঁজ নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ জানান চালক নেই, তিনি অসুস্থ। তখন সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে সাংসদের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সহায়তায় এই সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে করে তার মাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সাংসদ জিয়াউল হকের মা মারা যান।
এ বিষয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জানান, উপজেলার প্রায় সোয়া তিন লক্ষ মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার কেন্দ্র এটি। এখানে বিগত পাঁচ বছর যাবত কোনো অপারেশন হয় না। চালক থাকলেও নানা বাহানায় একবছর যাবত নতুন এ্যাম্বুলেন্স চলে না। এতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের সম্মূখীন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাজী আইনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ দিন যাবত চালক অসুস্থ থাকায় এ্যাম্বুলেন্স সেবা রোগীরা পাচ্ছেন না। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবুও কেন জানি এর সমাধান হচ্ছে না।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের আইনশৃঙ্খলা সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।